Posts

Showing posts from December, 2017

পৃথিবীর অথবা সভ্যতার শেষ যুদ্ধঃ তথ্য ও ধারণার যুদ্ধ -আইনুল বারী

পৃথিবীর অথবা সভ্যতার শেষ যুদ্ধঃ তথ্য ও ধারণার যুদ্ধ -আইনুল বারী --------------------------------------------------------------------------- (১) তথ্য ও ধারণাকে আলাদাভাবে না লিখলেও চলতো, কেননা তথ্য ধারণার অন্তুর্ভুক্ত, তথ্য দিয়েই ধারণা শক্তিশালী হয়। সভ্যতার সূচনা থেকে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতির পথে যখন থেকে যাপিত জীবনে চিন্তার মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে তখন থেকে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে ও গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে মতামত ও মতাদর্শগত অঘোষিত যুদ্ধের সুচনা হয়েছে। তবে তাকে একেবারে যুদ্ধ বলা সমিচীন নয়, বলা উচিত দ্বন্দ্ব-সংঘাত। পরবর্তীতে বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ আরও বেশি স্বার্থপর ও বিচ্ছিন্ন হলে দল ও কৌশল রচনা করে নিজেদের ধারণা তথা মতাদর্শকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে/(hegemony) প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। যুগে-যুগে মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার একটি সংগ্রাম জোরালো হয়েছে, নানা কলা- কৌশলে অন্যের উপর প্রভাব বিস্তারী ক্ষমতার জন্ম দিয়েছে। সেখান থেকেই বল প্রয়োগ, আধিপত্যবাদী যুদ্ধের, ও যুদ্ধশাস্ত্রের বিকাশ ঘটেছে। সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন যেমন একটু একটু করে প্রস্ফুটিত হয়েছে যুগের মূল্যবোধ তথা নৈতিক মানদন্ডে, সামাজিক সচেতনতা

আত্ম-সংশোধনের 'হুল ফোঁটানো' কৌশলঃ -আইনুল বারী

আত্ম-সংশোধনের 'হুল ফোঁটানো' কৌশলঃ -আইনুল বারী -------------------------------------------------- মনের ভেতরের অপরাধীকে বের করে নিয়ে আসার একটি পদ্ধতি আছে। একে বলে 'হুল ফোঁটানো' পদ্ধতি, ইংরেজিতে বলে Sting operation। জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস দমনে পাশ্চাত্যের গোয়েন্দারা এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে। টার্গেটের অপরাধমূলক তৎপরতার প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ মিললেই তার পেছনে গোয়েন্দারে মাঠে নামে। গোয়েন্দারা নিজেদেরকে অপরাধী চক্রের সদস্য হিসেবে টার্গেটের কাছে উপস্থাপন করে। তারপর তার সামনে টোপ দিয়ে তাকে ধাপে ধাপে  অপরাধে প্ররোচিত করে, এভাবে অপরাধ সংঘটনের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে হাতে নাতে আটক করে। রেজওয়ানুল আহসান নাফিস নামের ২১ বছরের একজন বাংলাদেশীকে ২০১২ সালে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরকিল্পনার অভিযোগে এফবিআই এই পদ্ধতিতে আটক করে। সে আল কায়দার সমর্থক ছিলো বলে এফবিআই মনে করে। জয়েন্ট টেরোরিজম টাস্ক ফোর্স টিমের কাছে তার সম্পর্কে আগে থকেই কিছু তথ্য-প্রমাণ ছিলো, এরপর গোয়েন্দা টিম তাকে হুল ফোঁটানো প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত মূহূর্তে আটক করে। বিচারে তার ৩০ বছরের কারাদন্ড হয়। তবে Stin

বাংলায় ইসলামের আগমন ও সামজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক রূপান্তরের নীরব বিপ্লবঃ বিকল্প ইতিহাস পাঠ -২

বাংলায় ইসলামের আগমন ও সামজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক রূপান্তরের নীরব বিপ্লবঃ বিকল্প ইতিহাস পাঠ -২ -আইনুল বারী ---------------------- বাংলা ভাষার আত্মপরিচয়ের সন্ধানেঃ আদিকালে এ অঞ্চলের বিভিন্ন জনপদের সর্বসাধারণের কথ্যভাষা ছিল নানা ধরণের প্রাকৃত ভাষা। অনু. খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভাষাসমূহের প্রচলন ছিলো। ভাষাবিদদের মতে সমস্ত প্রাকৃত ভাষারই শেষ স্তরটি হল অপভ্রংশ। মোটামুটি হিসেবে খৃষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের শেষ প্রান্তে এসে মধ্য ভারতীয় আর্য প্রাকৃত ভাষাগুলির অপভ্রংশ (অর্থাৎ যা খুব বিকৃত হয়ে গেছে এমন) অবস্থা থেকে স্বতন্ত্র পরিচয়ে আধুনিক রূপে বেরিয়ে আসতে শুরু করে ভারতের নব্য ইন্দো-আর্য আঞ্চলিক ভাষাগুলি, বাংলা-অসামিয়া-ওড়িয়া ভাষা তার অন্যতম। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতো গবেষকদের মত হলো, পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকেই বাংলা,আসামি ও উড়িয়া,মৈথিলি ইত্যাদি ভাষা উদ্ভূত হয়েছে। পূর্বী অপভ্রংশ থেকে গৌড়ীয় ধারার বাংলা-অসামিয়া-ওড়িয়া এই তিনটি ভাষার মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিদ্যমান। অনু. ৯০০- ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলা ভাষার যে বিকাশ ঘটে,

বাংলায় ইসলামের আগমন ও সামজিক-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের নীরব বিপ্লবঃ বিকল্প ইতিহাস পাঠ -১

বাংলায় ইসলামের আগমন ও সামজিক-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের নীরব বিপ্লবঃ বিকল্প ইতিহাস পাঠ-১ -আইনুল বারী -- ------------ ------------- (১) বাংলায় ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটেছিলো তিনটি চ্যানেলে। প্রথমতঃ আরব অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সাথে এ অঞ্চলের লোকালয়ের বাণিজ্যিক যোহাযোগের চ্যানেলে।আরব ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ দিন যাবৎ এ অঞ্চলের মানুষের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করে রেখেছিলো, তাদের মাধ্যমে আরবীয় সংস্কৃতির কিছু ছটা আর সেমিটিক ভাষার কিছু শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটে, নবম-দশম-এগারো শতকের কাল পর্বে এসে অর্থাৎ প্রায় প্রথম যুগের ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটে অল্পবিস্তর। দ্বিতীয়তঃ বারো শতকের পর থেকে ক্রমাগত এ দেশে সুফী-সাধক-পীর-ফকির ইসলাম ধর্ম প্রচারকদের আবির্ভাব হয়। ভারতবর্ষ ও বাংলায় সুফীসহ বিভিন্ন ঘরণার ধর্ম প্রচারকদের স্রোতের মতো আগমনের একটি বড় ঐতিহাসিক কারণ ছিলো, দূর্ধষ মোংগল নেতা হালাকু খানের আক্রমণে বাগদাদের পতন ও ব্যাপক হত্যা্কান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ। হালাকু খানের এই আক্রমণ বলা চলে সেদিন একটি সভ্যতারই পতন ঘটিয়েছিলো । জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন চর্চার কেন্দ্রস্থল তথা রাজধানী ছিলো বাগদাদ, যুক্তিব

প্রবঞ্চনার ভূবনে মিথ্যার নানা স্তরঃ -আইনুল বারী

Image
প্রবঞ্চনার ভূবনে মিথ্যার নানা স্তরঃ -আইনুল বারী ৬/১২/২০১৭ ------------------------------------------------- প্রবঞ্চনার ভূবনে মিথ্যার নানা স্তরঃ------------------------------- (১) সমাজ যখন সরলতাকে হারায় তখন ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠান সব কিছুরই সরলতা নষ্ট হয়। এই সরলতা হারানোর অন্তর্নিহিত কারণ যদি হয় সামাজিক নৈতিকতার অধঃপতন, তখন মানুষে মানুষে সরল বিশ্বাসের সম্পর্ক আর টিকে থাকে না। এটি সাধারণভাবে সর্বসাধারণে প্রভাব ফেলে, যৌথ কর্মকান্ডের যোগফল হিসেবে। এক পর্যায়ে পুরো সমাজটাই মনস্তাত্ত্বিকভাবে সন্দেহবাতিকগ্রস্ত (paranoid) হয়ে পড়ে। গণসন্দেহপ্রবণতার সামাজিকীকরণের ফল হলো, সর্বাত্মক প্রবঞ্চনা, যা দাঁড়িয়ে থাকে মিথ্যার নানা স্তরে, বিশ্বাসের নড়বড়ে ভিত্তির উপর। মানে মিথ্যার নানা স্তর তৈরি হয়, সত্যও ক্রমে দূরে সরে যায় । মিথ্যা বা সত্যকে পরষ্পর থেকে সুস্পষ্ট ব্যবধানে, সরাসরি, একক চেহাড়ায়, নির্ভেজালরূপে ও সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। এক কথায় আমরা প্রবঞ্চনার ভূবনে ভাসতে থাকি,ডুবতে থাকি। (২) সমাজ প্রবঞ্চনাময় হয় বলেই মিথ্যার নানা স্তর তৈরি হয়। অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যা সাজানো থাকে পিঁয়াজের খোসার মতোঃ

ঠগ, ঠগী কারা? ঠগবাজি কী?- বিকল্প ইতিহাস -আইনুল বারী

Image
ঠগ , ঠগী কারা ? ঠগবাজি কী ?- ইতিহাস পাঠ -আইনুল বারী ৫/১২/২০১৭  -- -------------- --- --------------------------   আমরা প্রায়শই প্রতারণা, প্রবঞ্চনা বোঝাতে 'ঠগ', 'ঠগী' 'ঠগবাজি' শব্দ ব্যবহার করি। 'ঠগ' একটি সংস্কৃত শব্দ যা থেকে 'ঠগী' শব্দটি অনুসৃত হয়েছে, ঠগ,ঠগী, ঠগবাজি, ঠক, ঠকানো শব্দগুলি বাংলা ভাষাতেও জায়গা করে নিয়েছে। অতীতে ঠগীরা যখন লোকালয়ে বিচরণ করতো, তখন ওদের পরিচিতি ছিলো 'ফাঁসিগর' হিসেবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজরা ঠগ/ঠগী শব্দটি তাদের ডিকশনারীতে ঢোকালো ১৮৩০ এর দিকে, Thug, Thugi (Thuggee) এমনভাবে বানান করে, যার অর্থ সংঘবদ্ধ ডাকাত দল, লুন্ঠনকারী, দস্যু ইত্যাদি। এর সাথে প্রতারক, ছলনাকারী অর্থটিও জুড়ে দেয়া হয়েছিলো, কেননা ঠগী সম্প্রদায়ের লোকেরা চালাকি করে টার্গেট পথচারীদের সাথে অন্তরঙ্গতা তৈরি করতো ও তাদের পথ চলার সংগী হতো, তারপর অনুসরণ করতে করতে সময় মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সম্পদ ও টাকা পয়সা লুট করে তাদেরকে মেরে ফেলতো। এখনও Thug শব্দটির বহুল ব্যবহার বিদ্যমান, গুন্ডা, সন্ত্রাসী এসব বোঝাতে। এই ঠগীদের ইতিবৃত্তি সম্পর্কে অনুসন

মানুষ বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট: অধ্যাপক হারারির অবাক করা বিশ্লেষণ -আইনুল বারী

মানুষ বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট: অধ্যাপক হারারির অবাক করা বিশ্লেষণ -আইনুল বারী ৫/১২/২০১৭ -------------------------------------------------------------------------- মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও কর্মের বায়ো-কেমিক্যাল এলগরিথমকে  (মানুষের সক্রিয়তা যেখানে বায়োকেমিক্যাল এলগরিথমের বেশি কিছু নয় ) ভীষণভাবে বুঝতে চাইছে ইলেক্ট্রনিক এলগরিদম নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধির রোবোটিক সত্তা , এবং প্রযুক্তির বিপ্লবের এই যুগে , ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্তরালে নানা দিক থেকে ইলেক্ট্রনিক এলগরিদম দিয়ে মানুষের এলগরিদমকে হ্যাকিং প্রক্রিয়া চলছে। এর মর্মার্থ হলো , এক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমান সত্তা (ইলেক্ট্রনিক এলগরিদম) প্রায় সকল প্রয়োজনে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। তারা পরিগণিত হবে নির্ভুল পরামর্শদাতা হিসেবে ; সিলিকন প্রোফেটদের মতোই , জন্ম নিবে টেকনো-ধর্মের। সভ্যতার এক যুগসন্ধিক্ষণে মানুষ যেমন মেশিনের কর্ম দক্ষতার কাছে হেরে গিয়েছিলো, তেমনি আরেকবার রোবোটের নির্ভুল চিন্তা-শক্তিময় কর্মদক্ষতার কাছে হেরে যাবে আবেগনির্ভর মানুষ। তখন মানুষের কী হবে? মানুষ কী করবে? যখন সে তার শারীরিক ও

যেখানে প্রায় সবাই ব্যস্ত অমানুষ হওয়ার নাগরিক (কু)শিক্ষা কার্যক্রমেঃ -আইনুল বারী

যেখানে প্রায় সবাই ব্যস্ত অমানুষ হওয়ার নাগরিক (কু)শিক্ষা কার্যক্রমে -আইনুল বারী ৩/১২/২০১৭ ---------------------------------------------- ( লেখাটি একাডেমিক বিবেচনার অনুরোধ করছি।) মানুষকে নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ও নাগরিক সত্তার সাথে একটি সুনির্দিষ্ট নৈতিক জীবনবোধ জুড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাধর হলো নাগরিক শিক্ষা। নাগরিক শিক্ষায় কোনো ডিগ্রী অর্জন নেই , পাস-ফেইল নেই , এই শিক্ষা প্রো-গণতান্ত্রিক ও সবাই প্রায় সমান তালে অর্জন করতে পারে। তাই নাগরিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ও কর্মদক্ষতা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি । নাগরিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষেরা প্রতি মূহূর্ত অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগায় , অবৈতনিক উপায়ে। তাদের কর্ম জাতিকে কর্মফল অনুসারে নির্দিষ্ট দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু নাগরিক শিক্ষা কেমন , তার উপর নির্ভর করে জাতির ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নাগরিক শিক্ষার সঞ্চালন ঘটতে থাকে বাধাহীনভাবে। আমরা যদি নিকৃষ্ট মানুষ হওয়ার শিক্ষাকেই নাগরিক শিক্ষার পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করি তাহলে আমরা সেদিকেই অ