মানুষ বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট: অধ্যাপক হারারির অবাক করা বিশ্লেষণ -আইনুল বারী

মানুষ বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট: অধ্যাপক হারারির অবাক করা বিশ্লেষণ
-আইনুল বারী
৫/১২/২০১৭
--------------------------------------------------------------------------
মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও কর্মের বায়ো-কেমিক্যাল এলগরিথমকে (মানুষের সক্রিয়তা যেখানে বায়োকেমিক্যাল এলগরিথমের বেশি কিছু নয় ) ভীষণভাবে বুঝতে চাইছে ইলেক্ট্রনিক এলগরিদম নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধির রোবোটিক সত্তা, এবং প্রযুক্তির বিপ্লবের এই যুগে, ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্তরালে নানা দিক থেকে ইলেক্ট্রনিক এলগরিদম দিয়ে মানুষের এলগরিদমকে হ্যাকিং প্রক্রিয়া চলছে। এর মর্মার্থ হলো, এক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমান সত্তা (ইলেক্ট্রনিক এলগরিদম) প্রায় সকল প্রয়োজনে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। তারা পরিগণিত হবে নির্ভুল পরামর্শদাতা হিসেবে; সিলিকন প্রোফেটদের মতোই, জন্ম নিবে টেকনো-ধর্মের।

সভ্যতার এক যুগসন্ধিক্ষণে মানুষ যেমন মেশিনের কর্ম দক্ষতার কাছে হেরে গিয়েছিলো, তেমনি আরেকবার রোবোটের নির্ভুল চিন্তা-শক্তিময় কর্মদক্ষতার কাছে হেরে যাবে আবেগনির্ভর মানুষ। তখন মানুষের কী হবে? মানুষ কী করবে? যখন সে তার শারীরিক ও মানসিক উভয় কাজের প্রয়োজনীয়তা থেকে বিচ্যুত হয়ে শ্রমবাজার থেকে ছিটকে পড়বে, আর প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়বে? আর শ্রমিক, পেশাজীবী, সাধারণ জনতা রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা হারাবে? কেননা শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করবে রোবোট গোষ্ঠী, অর্থাৎ সরকারের সাথে দরকষাকষির শক্তিটা গিয়ে পৌঁছুবে কয়েকটি বড় রোবোট (বহুজাতিক) কোম্পানির হাতে। তারা চাইলে ধর্মঘট করতে পারবে, দাবী-দাবী নিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে, ট্রেড ইউনিয়নের মতোই। বোঝা স্বরূপ বা সমস্যা আকারে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান হীন বিরাট বেকার জনগোষ্ঠী, প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়া সস্তা শ্রমের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতির দেশগুলিই সবচেয়ে দূর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে।বাংলাদেশের মতো সস্তা শ্রমের দেশগুলির গার্মেন্টসের বিরাট উপার্জনের খাতগুলি অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে।
মানুষ কী হারাবে, মানুষের হাতে কী থাকবে? মানুষের কাছে থাকবে সচেতনতা বা আত্মচেতনা, যা বুদ্ধি থেকে আলাদা। বুদ্ধি জটিল গণনা করে বের করতে পারে সবচেয়ে উত্তম সমাধান, কিন্তু চেতনা অনুভব করতে পারে উষ্ণতা ও শীতলতাকে, ভালোবাসা ও কষ্টকে। মানুষ ও রোবোটের মধ্যে এখনো এ এক দূর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান। অধ্যাপক হারারি এই পার্থক্যটি চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বিশ্লেষণের জন্যে বেছে নিয়েছেন অনেকগুলি উদাহরণ, সেসব থেকে তার অভিনব অনুমান তিনি দাঁড় করিয়েছেন যেঃ মানুষে মানুষে প্রযুক্তিগত ব্যবধান মানুষের প্রজাতিগত দীর্ঘ বিবর্তনের পথ ধরে একদিন মানুষেরই একটি দল মানুষ থেকে আলাদা হয়ে যাবে, Homo Sapiens থেকে Homo Deus-এ পরিণত হবে; এই Homo Deus-রা হলো Super Wo/Man বা পুরাকালের দেবতা-দেবীর মতোই।
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক Yuval Noah Harari এমনই বলছেন।তিনি অনেকগুলি বই/প্রবন্ধ লিখেছেন, আর বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সবচেয়ে আলোচিত বই দুটি হলো, Sapiens: A Brief History of Humankind (2014), Homo Deus: A Brief History of Tomorrow (2015) আমার মনে হয়েছে তিনি এক প্রকান্ড বিষয়কে ধরতে চাইছেন, যখন তার হাতে এখনো খুব বেশি চলক (Variables)নেই। একটি বিরাট বিষয়ে অল্প সংখ্যক চলক নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গেলে পুরো অনুমানটিই ভুল হতে পারে। আশা করি এই অভিনব শৈল্পিক চিন্তা-ভাবনার উপর আরও বিস্তৃত পরিসরে সমালোচনামূলক আরেকটি নোট লিখতে পারবো।


Comments

Popular posts from this blog

ঠগ, ঠগী কারা? ঠগবাজি কী?- বিকল্প ইতিহাস -আইনুল বারী

ক্ষমতার তত্ত্ব-তালাশঃ অবিশ্বাসের দর্শন বনাম বিশ্বাসের দর্শন

বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী যুগে ভারতবর্ষে ও চীনে মাদক বাণিজ্যের জাল ও বৃটিশ পুঁজির পুঞ্জীভবনঃ ঔপনিবেশিক শোষণ-নিপীড়ণের এক টুকরো ইতিহাস। -আইনুল বারী