হিমু তত্ত্ব ও হিমু দিবস -আইনুল বারী
হিমু তত্ত্ব ও হিমু দিবস
(আমার পুরোনো লেখা থেকে)
(আমার পুরোনো লেখা থেকে)
-আইনুল বারী
-------------------------
খেয়ালি লেখক হুমায়ুন আহমেদ এ দেশের তরুণদের রোমাঞ্চকর আনন্দ দিতে হলুদ পাঞ্জাবির হিমু তত্ত্ব দিয়েছিলেন। হিমুকে ‘আধুনিক নাগরিক জীবনের এক দিকভ্রান্ত বৈরাগ্য’ বললে অত্যুক্তি হবে না। তার একটা শখের কাজ হলো নিজের মনের বিভ্রান্তিকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে অস্বাভাবিক মজা পাওয়া। তার মধ্যে যেমন পরোপকারী একটা ভালোমানুষী আছে তেমনই কখনো কখনো তাকে দেখা যায় অন্যের প্রয়োজনের সময় আশ্চর্যরকম নির্বিকার থাকতে। তার আগ্রহের বিষয় এন্টি-লজিক, এটা কী জিনিস তা সুস্পষ্ট নয়।
-------------------------
খেয়ালি লেখক হুমায়ুন আহমেদ এ দেশের তরুণদের রোমাঞ্চকর আনন্দ দিতে হলুদ পাঞ্জাবির হিমু তত্ত্ব দিয়েছিলেন। হিমুকে ‘আধুনিক নাগরিক জীবনের এক দিকভ্রান্ত বৈরাগ্য’ বললে অত্যুক্তি হবে না। তার একটা শখের কাজ হলো নিজের মনের বিভ্রান্তিকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে অস্বাভাবিক মজা পাওয়া। তার মধ্যে যেমন পরোপকারী একটা ভালোমানুষী আছে তেমনই কখনো কখনো তাকে দেখা যায় অন্যের প্রয়োজনের সময় আশ্চর্যরকম নির্বিকার থাকতে। তার আগ্রহের বিষয় এন্টি-লজিক, এটা কী জিনিস তা সুস্পষ্ট নয়।
হিমু তার নিজের জীবন সম্পর্কে, জীবন যাপনে ব্যক্তির দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সুস্থির করে কিছু বলে না, অন্যের ব্যাপারেও তেমন কিছু বলে না। বারবার নানা ভঙ্গিতে পাঠককে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে হিমু হিমালয়ের মতো মহাপুরুষ হতে চায়, যা তার বাবার স্বপ্ন ছিলো। হয়তো হিমু সম্পর্কে এর বাইরে আরো কিছু ব্যঞ্জনা থাকতে পারে। যা হোক, এ নিয়ে কিছু লিখতে বসার কারণ হচ্ছে, আমি কয়েকদিন থেকে একটি টিভির পর্দায় ‘হিমু দিবসের’ বিজ্ঞাপন দেখছি ! এই হিমু দিবসের গুরুত্ত্বটা আসলে কী? আমাদের সন্তানদের ‘হিমু’ হয়ে ওঠার মধ্যে কী মহত্ব রয়েছে? হতাশাগ্রস্ত সমাজে এমনিতেই বিভ্রান্ত আমাদের তরুণ সমাজ। হিমু তত্ত্ব কি এখন তাদের আরো মানসিক অবসাদগ্রস্ত করবে না ? এক ধরণের রোমান্টিক অবসেশন ছড়িয়ে দেয়া ছাড়া এর মধ্যে ইতিবাচক আর কী থাকতে পারে?
হয়তো তারা বলবে হিমু মূলত একজন ভালো মানুষ। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য হিমু হতে হয় না। আমাদের সময় সাহিত্যে আমাদের নায়ক ছিলো গোর্কির মা উপন্যাসের পাভেল, নয়তো হাকেলবেরি ফিন, টম সয়ার। এডভেঞ্চারের জন্য পড়েছি শার্লোক হোমস, আগাথা ক্রিস্টি। আরো কতো অনুবাদ সাহিত্য, থ্রি কমরেডস, তিন গোয়েন্দা সিরিজ, এসব কতো ঘরণার । সেগুলি বরং মানসিক গঠনের ক্ষেত্রে সঠিক ভারসাম্য তৈরি করতে পেরেছিলো। যার উপর দাঁড়িয়ে আছি আজকের আমরা, আমাদের একাডেমিক প্রজন্ম । আমি দেখছি, আমাদের তরুণদের কোমল মায়াবী দৃষ্টিকে বাস্তবতা থেকে উদ্ভট কল্পনার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে ‘হিমু’র মতো সুগার কোটেড ইল্যুশন, কনফিউশন।
যেখানে এ শহরের, শহরতলীর, গ্রামীন জনপদের যেদিকে চোখ যায় কান্না ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। সেখানে তরুণদের দল বেঁধে পাশে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত, সেসব কান্না ভেজা চোখগুলির পাশে। অগাধ ভালোবাসা নিয়ে স্কাঊটিং করা উচিত। ইল্যুশন নয়, কনফিউশন নয়, দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে পথ দেখাতে হবে আমাদের সন্তানদের। এক ঝাঁক ধাধাঁ সৃষ্টিকারী হিমু নয়, আমাদের তৈরি করতে হবে প্রার্থণারত মায়াময় তরুণদল। জনকল্যাণে নিয়োজিত উদ্যোমী স্কাউট বাহিনী।
মানব কল্যাণের সত্যিকার মূল্যবোধে, মহান প্রতিপালকের প্রতি গভীর বিশ্বাসে তাদের যাবতীয় বিভ্রান্তি দূর হোক, এই প্রার্থণা করি।
Comments
Post a Comment