মরণ খেলা 'নীল তিমি' ( ব্লু হোয়েল গেম চ্যালেঞ্জেস), যার পেছনে আছে ভয়ানক সাইকোপ্যাথিক অপরাধী চক্র।

মরণ খেলা 'নীল তিমি' ( ব্লু হোয়েল গেম চ্যালেঞ্জেস), যার পেছনে আছে ভয়ানক সাইকোপ্যাথিক অপরাধী চক্র। -আইনুল বারী
--- --- ---- -----
মরণ খেলা 'নীল তিমি' ( ব্লু হোয়েল গেম চ্যালেঞ্জেস)। ভারত হয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে...। নীল তিমির দল যেমন জীবনের এক সায়হ্নে এসে দল বেঁধে আত্মহত্যা করে, সেই ধারণাকে অবলম্বন করে প্রায় নিখুঁত পরিকল্পনায় আমাদের শিশুদের জীবন কেড়ে নিতে চায় এক ভয়ানক সাইকোপ্যাথিক অশুভ চক্র। এই চক্রটি বিষাদগ্রস্ত শিশুদের টার্গেট করে হত্যাযজ্ঞের অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
ব্লু হোয়েল গেমের পরিচালকরা বিষাদাক্রান্ত ও হতাশাগ্রস্ত তরুণদেরকে চ্যালেঞ্জের নামে ৫০টি ধাপে আত্ম-নিপীড়ণমূলক ও অপরাধমূলক নির্দেশনা দেয়। এর নির্দেশনাগুলির কিছু কিছু এ রকম, সারা দিন কারো সাথে কথা না বলে থাকার চ্যালেঞ্জ, শেষ রাতে ঘুম থেকে জেগে হরর মুভি দেখা, ভোরের আলো ফুটে উঠার আগে একাকী ছাদে গিয়ে হাঁটাহাটি করা কখনো রেলিঙয়ে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা, নিজের শরীরে অসুখ বাঁধানো বা বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করা বা বন্ধু-বান্ধবীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক কাজ করা, সারা রাত হরর মুভি দেখা, হাতে ব্লেড বা নিডিল দিয়ে কেটে তিমির ছবি আঁকানো, কোনো ভয়কে জয় করা, ফেসবুকে এ বিষয়ে কোনো স্ট্যাটাস দেয়া, এভাবে...
এ সব নির্দেশনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে টার্গেট তরুণ গেমারদের মনকে অপরাধগ্রস্ত ও আরও বিষাদ্গ্রস্ত করে তোলা হয়, অবশেষে তাদেরকে আত্মহননের টার্গেটে পৌঁছে দেয়া হয় । এটাই হলো মুক্তি, খেলায় জয়। খেলার শুরুতে খুব বেশি বুঝতে পারে না গেমার, চ্যালেঞ্জকে খেলায় জেতার চ্যালেঞ্জ বলেই মনে হয়, তাই যতোই একের পর এক ধাপ অতিক্রম করে খেলা এগুতে থাকে ততোই নেশায় পেয়ে বসে গেমারদেরকে। কিন্তু শেষ ধাপের দিকে পরিণতিকে বুঝতে পেরে খেলা থেকে মুক্তি চাইলেও (খেলার প্রতি) অস্বাভাবিক অবসেশনের কারণে কেউ কেউ খেলার ফাঁদ থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারে না। কিয়রেটররা ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও ব্লাকমেইলের কৌশলে আবেগী তরুণ গেমারদের বাধ্য করে শেষ পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে। এ খেলার পেছনে অপরাধীরা মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে কাজে লাগিয়েছে। বোঝায় যা্‌য়, অপরাধীদের মনোবিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান আছে।
এই অপরাধী চক্রের কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। একজনের নাম ফিলিপ, রাশান, বয়স অনু. ২২ বছর। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক, সে মনে করে না সে অপরাধ করছে। তার যুক্তি মোটামুটি এইঃ যারা বিবেক-বুদ্ধিহীন ভাবে নিজেদের ও পরিবারের ক্ষতি স্বীকার করতে কুন্ঠা করে না, নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে অর্থিহীন আত্মপীড়ণ করে, এমনকি সামান্য কোনো খেলায় জেতার জন্যে আত্মহনন করতে চায়, অন্যের প্ররোচণায় নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে চিরতরে নিজেকে নিঃশেষ করতে চায়, তারা আসলে সভ্য সমাজের বোঝা, পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তাই তাদেরকে অর্থাৎ সমাজের আবর্জনাগুলি বেছে বেছে নির্মূল করে সমাজ সংস্কারকের কাজই তারা করছে।
এই অশুভ মরণ খেলার বিপরীতে বেরিয়েছে পিংক হোয়েল গেম, এন্টি ব্লু হোয়েল গেম ইত্যাদি। কিন্তু সব চেয়ে বড় কথা ব্যাধিদ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরার আগেই আমাদের বাবা-মাদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। সন্তানদের বিষন্নতাকে দূর করার দায়িত্ব আমাদের। তাদের হাতে ইন্টারনেটের চাবি দিয়েছি, কিন্তু জানি না তারা সেখানে কী করছে। আমরা চাই না হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো কেউ আমাদের শিশুদের কেড়ে নিক আমাদের কাছ থেকে।

Comments

Popular posts from this blog

ঠগ, ঠগী কারা? ঠগবাজি কী?- বিকল্প ইতিহাস -আইনুল বারী

ক্ষমতার তত্ত্ব-তালাশঃ অবিশ্বাসের দর্শন বনাম বিশ্বাসের দর্শন

বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী যুগে ভারতবর্ষে ও চীনে মাদক বাণিজ্যের জাল ও বৃটিশ পুঁজির পুঞ্জীভবনঃ ঔপনিবেশিক শোষণ-নিপীড়ণের এক টুকরো ইতিহাস। -আইনুল বারী